আওয়ামী লীগ নিধনের রাষ্ট্রীয় প্রকল্প: ইউনুস সরকারের ছদ্মবেশী ফ্যাসিবাদ

sorbosesh24.com
মতামত

(৪ মাস আগে) ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৪:৪৫ অপরাহ্ন

ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এখন ইতিহাসের এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর দেশের রাজনৈতিক চালচিত্র এমনভাবে বদলে গেছে যে, স্বাধীনতাযুদ্ধের উত্তরসূরি শক্তিগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একদিকে চলছে তথাকথিত “টেকনোক্র্যাটিক” সরকার, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির উপর চলছে পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক নিধনযজ্ঞ। গণতন্ত্রের কথা বলে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা আজ জনরায়ের প্রতিফলনকে ভয়-ভীতি আর রক্তের পথে ঢেকে ফেলেছে। এই অন্ধকারযাত্রার অগ্রনায়ক হচ্ছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস—একজন ধুরন্ধর স্ট্র্যাটেজিস্ট, যিনি বহির্বিশ্বে “উন্নয়নদূত” হলেও দেশের ভেতরে হয়ে উঠেছেন এক বিপজ্জনক ফ্যাসিবাদের রূপকার।


ক্ষমতার উৎস নয়, দমনযন্ত্র চালানোর লিপ্সা
ড. ইউনুসের সরকার মূলত ক্ষমতার উৎস থেকে নয়, ক্ষমতার সুযোগ থেকে জন্ম নিয়েছে। সরাসরি কোনো নির্বাচনের বৈধতা ছাড়াই গঠিত এই প্রশাসন আজ যেভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করছে, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় বিপদ। ক্ষমতার উৎস যদি জনগণ না হয়, তবে ক্ষমতা রক্ষা করতে হয় বলপ্রয়োগে, ভয়ের মাধ্যমে, প্রতিহিংসার পথে।

এই সরকার প্রথমেই টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগকে—একটি দল যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছে, যাদের রক্তে গণতন্ত্রের বীজ রোপিত। অথচ আজ সেই দলের নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলার আসামী, গুম-খুনের শিকার, অথবা মব সিলিংয়ের লক্ষ্যবস্তু। ইউনুস সরকারের দমনযন্ত্র আওয়ামী লীগের উপরই সবচেয়ে নির্মম হয়ে উঠেছে—এ যেন এক প্রাচীন প্রতিশোধের রাজনীতি!

মব সিলিং: গণতন্ত্রের নামে গণবিচার
বাংলাদেশে মব সিলিং নতুন নয়, কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি যেন সরকারপ্রণোদিত সামাজিক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। “ও হাসিনার লোক”—এই একটি অভিযোগেই বহু মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে একজন কর্মী, সাধারণ মানুষ, কিংবা কোনো দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা করার অধিকার কীভাবে সাধারণ জনগণ পেয়ে যাচ্ছে?

মূলত এ এক প্রকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সন্ত্রাস। রাষ্ট্র নিজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নয়, বরং জনতার হাতে “বিচার” তুলে দিয়েছে। একে গণতন্ত্র নয়, বরং অ্যানার্কি বলা যায়। ইউনুস সরকার জনগণের কাঁধে বসে তাদের দিয়ে বিরোধীদের নির্মূল করছে। এতে জনতার একাংশ হয়তো আনন্দ পাচ্ছে, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে—মব বিচার একদিন সেই বিচারকদেরই গ্রাস করে। গণতন্ত্রে অপর মতের অবস্থান থাকে, শত্রু নয়। কিন্তু এই সরকারের বর্ণচোর রাজনীতিতে বিরুদ্ধ মত মানেই ‘দেশদ্রোহ’।
আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও মৌন সম্মতি
বিশ্ব মিডিয়া ও উন্নয়ন অংশীদাররা আজ আশ্চর্যরকম নীরব। এক সময় যে ইউনুস আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘পুওর পিপল’স ব্যাংকার’ হিসেবে সমাদৃত ছিলেন, তিনিই আজ দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে দমননীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ পশ্চিমা বিশ্ব চুপচাপ। এটি নিছক বোকামি নয়—এটা রাজনৈতিক সুবিধাবাদের প্রকাশ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চায় এমন সরকার, যাদের প্রশ্ন করলে তারা চুপ থাকে, বাজার খুলে রাখে, আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের “রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট” নিশ্চিত করে।

তাদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার—সবকিছুই আপেক্ষিক। যখন ইউনুসের বিরুদ্ধে শ্রমিক নিপীড়নের, অর্থ পাচারের, এবং ভুয়া প্রজেক্টের অভিযোগ উঠে, তখন এসব ‘গ্লোবাল ইলিট’ চুপ। এই চুপচাপ অবস্থানই বাংলাদেশের জনগণের উপর আরেক ধরণের চাপ—আন্তর্জাতিক নৈতিকতার ভণ্ডামি।
ইউনুসের ছদ্মবেশ: এনজিওবাদ থেকে একনায়কতন্ত্র
ড. ইউনুসের পরিচয় বহুমাত্রিক। তিনি এনজিও সাম্রাজ্যের নির্মাতা, নোবেল লবিস্ট, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, আবার একই সঙ্গে রাজনীতির ছায়াতলে দখলদারিত্বের খেলোয়াড়। তার এনজিওগুলো একসময় দেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেগুলো পরিণত হয়েছিলেন সুদের ফাঁদে ফেলা এক ভয়ংকর কর্পোরেট মেশিনে।
এখন সেই একই ধরণে তিনি বাংলাদেশে একটি ছদ্ম-প্রশাসন গড়েছেন—নির্বাচনবিহীন, জবাবদিহিহীন, জনগণবিমুখ। এই সরকার কার? জনগণের না কর্পোরেট লবির? উত্তর খোঁজার দায় আজ আমাদের সবার।

বাংলাদেশ: এক অঘোষিত গৃহযুদ্ধের প্রান্তে
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে যে সহিংসতার সূত্রপাত হয়েছে, তা আর রাজনৈতিক সহিংসতা নয়—এ এক অঘোষিত গৃহযুদ্ধ। সামাজিক বিভাজন, রাজনৈতিক ঘৃণা, ধর্মীয় মেরুকরণ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য—সব মিলে একটি জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে।

এই যুদ্ধ আর অস্ত্রের নয়, এটি তথ্য নিয়ন্ত্রণ, মিডিয়া দখল, অপপ্রচার এবং মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংসের যুদ্ধ। প্রতিটি টিভি চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত এখন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অস্ত্রাগার।

ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না
আজ আমরা যে সময় পার করছি, তা নিছক একটি সরকারের উদ্ভব নয়—এ এক কৌশলী দখলযুদ্ধ। আওয়ামী লীগ নিধন এখন ইউনুস সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এবং এই কাজটি তারা করছে “গণতন্ত্র” নামক এক আবরণে। কিন্তু জাতি জানে, এই গণতন্ত্র ছদ্মবেশী, মিথ্যা এবং সর্বনাশা।
এখনো সময় আছে—জনগণকে জাগতে হবে। রাজনীতিবিদদের দলীয় সীমার বাইরে গিয়ে দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্য গড়তে হবে। না হলে এই দমননীতি শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সমগ্র গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করে দেবে।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না—না ইউনুসকে, না তাঁর দোসরদের, আর না সেই নিরব দর্শকদের যারা আজ চোখ বুঁজে আছেন।

শাখাওয়াত হোসেন 
আমেরিকান প্রবাসী বাঙালি ব্যবসায়ী। 
প্রাথমিক সদস্য বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মতামত থেকে আরও পড়ুন

sorbosesh24.com
"বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা নয় বললে, বাংলাদেশ কীভাবে মুক্ত?"
বঙ্গবন্ধুর সনদ বাতিল: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক জঘন্য কলঙ্ক

সর্বশেষ

sorbosesh24.com
"বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা নয় বললে, বাংলাদেশ কীভাবে মুক্ত?"
বঙ্গবন্ধুর সনদ বাতিল: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক জঘন্য কলঙ্ক